শুরুর কথা
পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম অনুষঙ্গ। দেহ সজ্জিত করা এবং সতর (শরীর) আবৃত করার প্রয়োজনীয় মাধ্যম। তা ছাড়া এটি ব্যক্তিত্ব প্রকাশেরও অনন্য উপকরণ।
কোরআন মাজিদের এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা পোশাকের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন-
“হে মানবজাতি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দোষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম। এসব আল্লাহর নির্দেশনাবলির অন্যতম, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা: আল-আরাফ, আয়াত: ২৬)
নিম্নে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান বিষয়ে ইসলামের আটটি নির্দেশনা তুলে ধরা হলো-
ক] পোষাক পরিধানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس)
হাদিস নম্বরঃ ১৭৭৩
খ] সতর আবৃত করা
পোশাক-পরিচ্ছদ এমন হতে হবে, যা পুরো সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের মূল উদ্দেশ্যই সতর ঢাকা। পোশাক প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
“হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।” (সুরা: আল-আরাফ, আয়াত: ২৬)
সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ, তা যেন শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়!
গ] নারী-পুরুষ স্বতন্ত্র পোশাক পরিধান করা
হাদিস শরিফে এসেছে- রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন ওই পুরুষকে যে নারীর পোশাক পরে এবং ওই নারীকে যে পুরুষের পোশাক পরে।
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس)
হাদিস নম্বরঃ ৪০৫৪
ঘ] খ্যাতির আশায় পোশাক না পরা
প্রতি ঈদ বাজারে পোশাক কারখানাগুলো পরিচিত মডেল এবং টিভি সিরিয়ালের নামে বাহারি পোশাক বাজারজাত করে থাকে। আর উঠতি ছেলে-মেয়েদের এসব পোশাকের প্রতি থাকে বাড়তি আগ্রহ। অথচ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব পোশাক না পরার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন-
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে গর্ব করে বা প্রসিদ্ধি লাভের জন্য পোশাক পরবে, আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে।”
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس)
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৮৭
ঙ] পোশাক পরিধানে কৃপণতা না করা
অপচয় ও কৃপণতা সর্বক্ষেত্রেই নিন্দনীয়। পোশাক-পরিচ্ছদেও এর ব্যতিক্রম নয়। সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি কৃপণতা করে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে ইসলামে তাদের অপছন্দ করা হয়েছে। মালিক বিন আউফ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হাদিস-
‘একবার আমি [আবুল আহওয়াসের পিতা মালিক বিন আউফ] রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। তখন আমার পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোশাক। তিনি [রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- “তোমার কি সম্পদ আছে?” আমি বললাম, “হ্যাঁ।” তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন- “কী সম্পদ আছে?” আমি বললাম, “সব ধরনের সম্পদই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি।” তখন তিনি ইরশাদ করলেন- “যখন আল্লাহ তাআলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার ওপর তাঁর নিয়ামতের ছাপ থাকা চাই।”
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪৯/ সাজসজ্জা (كتاب الزينة)
হাদিস নম্বরঃ ৫২৯৩
চ] পুরুষের লুঙ্গী/পাজামা টাকনুর উপরে পরা
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের গর্ব-অহংকার প্রকাশের জন্য নিজের কাপড় (পায়ের গিঁটের নীচে) ঝুলিয়ে পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।
তখন আবূ বকর (রাঃ) বলেনঃ আমার লুঙ্গীর প্রান্তভাগ ঝুলে থাকে, আর এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তাদের মধ্যে নও, যারা গর্বভরে এরূপ করে থাকে।
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس)
হাদিস নম্বরঃ ৪০৪১
ছ] পরিষ্কার ও পরিপাটি রাখা
পোশাক-পরিচ্ছদ দ্বারা সতর আবৃত করার পাশাপাশি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিপাটি রাখা ইসলামের নির্দেশনা। সাহল বিন হানজালিয়া (রা.) বলেন, কোনো এক সফর থেকে ফেরার পথে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রিয় সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলেন-
“তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে গমন করছো। সুতরাং তোমাদের হাওদাগুলো গুছিয়ে নাও এবং তোমাদের পোশাক পরিপাটি করো, যাতে তোমাদের [সাক্ষাৎ করতে আসা মানুষের ভিড়ে] কেন্দ্রবিন্দুর মতো [সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন] মনে হয়। [জেনে রেখো] আল্লাহ তা’আলা স্বভাবগত নোংরামি বা ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা থাকা, কোনোটাই পছন্দ করেন না।”
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس)
হাদিস নম্বরঃ ৪০৪৫
জ] বিধর্মীদের পোশাক না হওয়া
বিধর্মীদের অনুকরণে তাদের ধর্মীয়/সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আচার/অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত নির্দিষ্ট ডিজাইন/রং-এর পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ। হাদিসে এসেছে-
“যে ব্যক্তি অমুসলিমদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়।”
(তবারানি আওসাত, হাদিস: ৩৯২১)
আল্লাহ তাআলা আমাদের পোশাকের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ইয়া রাব্বিল ‘আলামিন।